আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মানুষের কষ্ট বাড়বে

বিদ্যুতের দাম বাড়বে, এ কথা শুনেই আৎকে উঠছে মানুষ। এমনিতেই গেলো কয়েক মাসে হু হু করে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলোতে প্রতিদিন ক্রেতাদের আফসোসের সুর শোনা যায়। পাড়া-মহল্লায়, শহরে-বিভিন্ন আড্ডায় মানুষ এখন জিনিসপত্রের দাম নিয়েই আলোচনা করে। এরমধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে তা আমজনতার কষ্ট বাড়াবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি। কেননা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হলে এর প্রভাব পড়বে প্রতিটি খাতে। উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হবে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের জীবন-জীবিকা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। গার্মেন্টস শিল্প থেকে শুরু করে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতেও ব্যয় বাড়বে। তাই জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের এই সিদ্ধান্তে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের সাধারণ মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

সচেতন মহল বলছেন, বাস্তবতার নিরিখেই সরকারের উচিৎ গ্যাস বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা। প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকি ব্যয় বহন করা উচিত বলেও মতামত ব্যক্ত করেছেন তারা।

এই বিষয়ে সামাজিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দীন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘করোনার সংকট কাটিয়ে উঠার আগেই ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় পন্য সরবরাহের ব্যয় বেড়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আরো কয়েক দফা বেড়েছে। মানুষের ব্যায় বাড়লেও আয় বাড়েনি। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস চলছে। এরই মধ্যে যদি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে উৎপাদন ব্যায় বেড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সহ প্রতিটি পন্যের দাম আরো বাড়বে। গার্মেন্টস শিল্পে প্রভাব পরবে। পরিবহন খাতে প্রভাব পড়বে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের আর বাঁচার উপায় থাকবে না। তাই সরকারের উচিৎ জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা। অতিপ্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকি ব্যয় বহন করা উচিত।’

এই বিষয়ে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে এই মুহুর্তে সাধারণ মানুষ এমনিতেই সংকটে পড়েছে। তার উপর যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে এই সংকট আরো বাড়বে, জীবন যাত্রার মান আরো নিম্নমুখি হবে এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নিত্যপন্য যেগুলো প্রয়োজন, সেগুলোসহ সকল পন্যের দাম আরো বাড়বে। পরিস্থিতি এখন যা আছে, তার চেয়েও দূর্বিসহ হবে। তাই গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি।’

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই আন্দোলন করে যাচ্ছি। যখন ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করার প্রস্তাব চলছিল, তখন রাস্তায় নেমেছি। আগেই বলেছিলাম যে, ডিজেলের দাম বাড়ানো হলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বাড়বে। এটাই ঘটেছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনার কারণেও আমরা আন্দোলন করেছি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চলমান অস্থিরতা আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষ দূর্ভোগে পরবে। মূলত সরকারী দল ও তাদের মন্ত্রনালয়ের লোকেরা আরো বেশি লুটপাটের কারণে এগুলো করছে। ইতিপূর্বে কোন রাজনৈতিক দল জনগণের সাথে এমন নিষ্ঠুরতা করেনি।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোটা কোন ভাবেই উচিৎ নয়। জনগণকে তোয়াক্কা না করে সরকার যদি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে, তাহলে এটা জনগণের সাথে অন্যায় করা হবে। জনগণকে কষ্টের মধ্যে রাখা সরকারের নৈতিক অধিকার নেই। দাম না বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের লুটপাট বন্ধ করা উচিৎ।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চলমান পরিস্থিতি জেনেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তাই সরকার সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশাবাদি তারা।

এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বেড়েছে তা ঠিক, তবে মানুষের ইনকামও বেড়েছে। আগে একজন সাধারণ কর্মী ৩ হাজার টাকা বেতন পেতেন, এখন ১২ হাজার টাকা পাচ্ছে। তবে গ্যাস বিদ্যুতের দাম এই মুহুর্তে বাড়ানো হোক তা আমরাও চাই না। এমনও হতে পারে যে, সরকারকে বেকায়দায় ফালাতে এই পরিস্থিতির্তে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা রাখতে পারে। কারণ ষড়যন্ত্রতো চারদিক থেকেই চলছে। আমি মনে করি সরকার বরাবরের মতই সময় উপযোগি সিদ্ধান্ত নেবে।’